Thank you for trying Sticky AMP!!

স্টেশনের ১৬১ শতক জমি প্রায় পুরোটাই বেদখলে

রেলপথ হয়েছে মহাসড়ক, আর স্টেশনের ১৬১ শতক জায়গার মধ্যে আছে মাত্র ৫ শতক। বাকি ১৫৬ শতক যাঁদের দখলে, তাঁরা কাগজপত্র দেখিয়ে জমি নিজেদের বলে দাবি করছেন। তবে রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দখলদারেরা যে কাগজপত্র দেখাচ্ছেন, তা ঠিক নয়।

এমন অবস্থা ঝিনাইদহ রেলওয়ে স্টেশনের। সম্প্রতি ঝিনাইদহ শহরের ওপর দিয়ে রেলপথের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। তাঁরা ফরিদপুর থেকে মাগুরা ও ঝিনাইদহ হয়ে মেহেরপুরের মুজিবনগর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের দাবি করছেন। এ জন্য আন্দোলনকারীরা পুরোনো রেলস্টেশনের জমি দখলমুক্ত করার কথা বলছেন। এ জন্য ইতিমধ্যে ৪২টি আপত্তি মামলা করেছে রেলওয়ে বিভাগ।

রেলপথের দাবিতে চলমান আন্দোলনের আহ্বায়ক খন্দকার হাফিজ ফারুক বলেন, তাঁরা ঝিনাইদহে রেলপথ পুনঃস্থাপনের আন্দোলন করছেন। এ জন্য রেলওয়ের সব জায়গা ফেরত নিতে হবে, ফেরত নিতে হবে বেদখল হয়ে যাওয়া স্টেশনের জায়গাও।

ঝিনাইদহ শহরের প্রবীণ ব্যক্তি ও আন্দোলনের নেতা বাবু নন্দ দুলাল সাহা (৭০) বলেন, একসময় যশোর জেলা সদরে তাঁরা প্রশাসনিকসহ নানা কাজে যেতেন। এ জন্য তাঁরা ট্রেন ব্যবহার করতেন। ঝিনাইদহ থেকে ট্রেনে করে যশোর নিয়ে যেত জে জে আর (যশোর-ঝিনাইদহ রেলওয়ে) কোম্পানি। এর স্টেশন ছিল শহরের শেরেবাংলা সড়কে। সেখানে বর্তমানে একাধিক মার্কেট গড়ে উঠেছে।

নন্দ দুলাল সাহা আরও বলেন, ১৯৫০ সালের পর রেলপথের পাশ দিয়ে বাস সার্ভিস চালু করা হয়। স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি এসব বাস চালু করেন। তাঁরা ট্রেনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা শুরু করেন।

বাসমালিকেরা যাত্রী ধরতে নানা উপহারের পাশাপাশি বাড়ি থেকে উঠিয়ে নিতেন। এভাবে কিছুদিন চলার পর বাসের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় হেরে যায় ট্রেন। রেলপথ থেকে তুলে নেওয়া হয় ট্রেনগুলো। বিলুপ্ত হয়ে যায় জে জে আর কোম্পানি। পরে বাস চলাচলের সুবিধার্থে রেলপথ উঠিয়ে সেখানে ইটের রাস্তা তৈরি করা হয়, যা বর্তমানে পিচঢালা পথ—যশোর-কুষ্টিয়া মহাসড়ক। আর স্টেশনের জায়গা থাকে পড়ে।

ঝিনাইদহ পৌর ভূমি কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিএস রেকর্ডের আগে ঝিনাইদহ শহরের শেরেবাংলা সড়কে রেলওয়ে স্টেশনের ১৬১ শতক জমি ছিল। ঝিনাইদহ মৌজায় কয়েকটি দাগে এই জমি ছিল। পরে সিএস রেকর্ডে রেলওয়ের নামে ৬৩ দশমিক ৫০ শতক জমি রেকর্ড হয়। সর্বশেষ আরএস রেকর্ডে জমির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫ শতকে। সেখানে জমির শ্রেণিতে দোকান বলে উল্লেখ করা হয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওই জমির মধ্যে জনৈক ফসিয়ার রহমানের ১৭ শতক, খয়বার আলীর ১৩, সালাউদ্দিন আহম্মেদের ৮, আবু জাফর মিয়ার ১০, জামাত আলী বিশ্বাসের সাড়ে ৮ এবং জামাত আলী ও আকবার আলীর নামে ৭ শতক জমি রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, ১৯৮৬ সালে শহরের শেরেবাংলা সড়কের বেশ কয়েকজন রেলওয়ের জমি বন্দোবস্ত নেন। এর মধ্যে জালাল উদ্দিনের স্ত্রী রওশন আরা বেগম ১৬ শতক, শেখ হাবিবুর রহমান ৫, আবু জাফর গং সাড়ে ১২, জামাত আলীর স্ত্রী জয়নব বিবি সাড়ে ৮, গোলাম খয়বরের ১০, ফজলুল হক গং ৬, জামাত আলী গং ৭, সালাউদ্দিন গং ৮, আবদুল ওহাব ৮ এবং ফসিয়ার রহমান ১৪ শতক জমি নেন। ২০০৮ সালের ৬ আগস্ট এই বন্দোবস্ত বাতিল করা হয়। তারপরও ওই ব্যক্তিরা দখল ছাড়েননি। এ ছাড়া আরও কিছু ব্যক্তির দখলেও কিছু জমি রয়েছে। এর সঠিক হিসাব পাওয়া যায়নি।

জানতে চাইলে দখলে রাখা আবু জাফরের ছেলে মোবারক হোসেন ও শেখ হাবিবুর রহমানের ছেলে শেখ মিজানুর রহমান বলেন, তাঁর বাবা ১৯৬২ সালের আগে এই জমি সরকারের কাছ থেকে বন্দোবস্ত নেন। সেই সময় ৯৯ বছরের জন্য দলিল করে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। এর ওপর ভিত্তি করে তাঁরা নাম খারিজ করেছেন ও নিয়মিত খাজনা দিয়ে যাচ্ছেন। আগের দলিল হারিয়ে যাওয়ায় নতুন করে ১৯৮৬ সালে আবারও বন্দোবস্ত নেন।

সর্বশেষ ২০০৮ সালে বন্দোবস্ত বাতিল হওয়ার পরও জমি দখলে রাখার বিষয়ে মোবারক হোসেন বলেন, বাতিলের আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা চলছে। যত দিন সমাধান না হচ্ছে, তত দিন জমি তাঁদের।

এসব ব্যাপারে রেলওয়ের খুলনা অঞ্চলের কানুনগো জিয়াউল হক বলেন, তাঁরা এ জমি ফেরত নিতে প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। তাঁরা ভূমি জরিপ অফিসে ৪২টি আপিল দিয়েছেন। আশা করছেন, জমি ফেরত পাবেন।

রেলওয়ের পাকশী বিভাগীয় কার্যালয়ের ভূ-সম্পত্তি কর্মকর্তা ইউনুচ আলী বলেন, দখলকারীরা ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে জমি দখলে রেখেছেন। এগুলো ফেরতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।