দেশে আমদানি পণ্যের ৪৩ শতাংশই আসে চীন ও ভারত থেকে

চীন থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি আমদানি করে শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতি
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশের পণ্য আমদানির সর্বোচ্চ ৪৩ শতাংশ ভারত ও চীন থেকে আসে। সেই তুলনায় দেশ দুটিতে রপ্তানি খুবই নগণ্য, মাত্র ৫ শতাংশ। ফলে ভারত ও চীনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে বেশ পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশ ৭ হাজার ৫৬০ কোটি ডলারের পণ্য আমদানি করেছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ২৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ অথবা ১ হাজার ৯৩৫ কোটি ডলারের পণ্যই আমদানি হয়েছে চীন থেকে। তারপরই ভারতের অবস্থান। দেশটি থেকে আমদানি হয়েছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৬৯ কোটি ডলারের পণ্য, যা মোট আমদানির ১৮ দশমিক ১১ শতাংশ।

চীন থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি আমদানি করে শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতি। দেশটি থেকে গত অর্থবছর ৪২৫ কোটি ডলারের যন্ত্রপাতি আমদানি হয়েছে। তারপর সবচেয়ে বেশি আমদানি হয়েছে বস্ত্র খাতের কাঁচামাল তুলা। গত অর্থবছর ২২৮ কোটি ডলারের তুলা আমদানি হয়েছে। এ ছাড়া ১৯১ কোটি ডলারের ইলেকট্রনিক পণ্য, ১৩৭ কোটি ডলারের নিট কাপড়, ১২২ কোটি ডলারের কৃত্রিম তন্তু আমদানি হয়েছে।

অন্যদিকে ভারত থেকে বর্তমানে তুলা আমদানি হচ্ছে বেশি। গত অর্থবছর দেশটি থেকে মোট আমদানির ৩১ শতাংশ ছিল তুলা। অর্থের হিসাবে ৪২২ কোটি ডলার। এ ছাড়া ২২১ কোটি ডলারের শস্য, ৭৭ কোটি ডলারের মোটরযান, ৫৭ কোটি ডলারের চিনি ও চিনিজাতীয় পণ্য, ৫৪ কোটি ডলারের জীবাশ্ম জ্বালানি আমদানি হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়। তার মধ্যে ভারতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১৯৯ কোটি এবং চীনে ৬৮ কোটি ডলার। এদিকে চলতি অর্থবছরের প্রথম ১০ মাসে ৪ হাজার ৫৬৮ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্যে ভারতে ১৮৩ কোটি এবং চীনে ৫৩ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে।


সাউথ এশিয়ান ফ্রি ট্রেড এরিয়া (সাফটা) চুক্তির আওতায় ভারতে ২৫টি পণ্য ছাড়া সব পণ্যে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা পায় বাংলাদেশ। এ ছাড়া চীনের বাজারে ৯৯ শতাংশ পণ্যেই শুল্কমুক্ত সুবিধা আছে। তার পরও দেশ দুটিতে যে রপ্তানি হচ্ছে, তা মোট পণ্য রপ্তানির মাত্র ৫ শতাংশের কাছাকাছি। যদিও স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যুক্ত হলে দেশ দুটিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা থাকবে না। তখন এ ধরনের সুবিধা পেতে হলে উভয় দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য বা অন্য কোনো চুক্তি করতে হবে বাংলাদেশ সরকারকে।

আমাদের দেশের বাণিজ্য হয় মূলত চারটি বলয়ে—উত্তর আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), চীন ও ভারত। প্রথম দুটি অঞ্চলে আমাদের পণ্য রপ্তানি বেশি। আর বাকি দুই দেশ অর্থাৎ ভারত ও চীন থেকে আমদানি বেশি। এতে কোনো ক্ষতি নেই।
সেলিম রায়হান, নির্বাহী পরিচালক, সানেম


ইপিবির তথ্যানুযায়ী, গত অর্থবছর ভারতে রপ্তানি হওয়া ১৯৯ কোটি ডলারের মধ্যে তৈরি পোশাক ছিল ৭২ কোটি ডলার। এ ছাড়া ১৯ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য এবং ১০ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। অন্যদিকে চীনে রপ্তানি হওয়া ৬৮ কোটি ডলারের মধ্যে ২২ কোটি ডলার ছিল তৈরি পোশাক। পাট ও পাটজাত পণ্য এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি যথাক্রমে ১৭ এবং ৯ দশমিক ৭৯ শতাংশ।

চীন ও ভারত থেকে প্রবাসী আয় উল্লেখযোগ্য কিছু নয়। প্রবাসী আয় আসা শীর্ষ ৩০ দেশের মধ্যে দেশ দুটির নাম নেই। এ ছাড়া বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগে (এফডিআই) শীর্ষ ১০ দেশের মধ্যে চীন ও ভারত থাকলেও উভয় দেশের মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ২০৩ কোটি ডলার।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে ২ হাজার ১১৬ কোটি ডলারের এফডিআই এসেছে। তার মধ্যে চীনের বিনিয়োগ ১৩৫ কোটি ডলার। আর ভারতের বিনিয়োগের পরিমাণ ৬৯ কোটি ডলার।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান এ নিয়ে গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের দেশের বাণিজ্য হয় মূলত চারটি বলয়ে—উত্তর আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), চীন ও ভারত। প্রথম দুটি অঞ্চলে আমাদের পণ্য রপ্তানি বেশি। আর বাকি দুই দেশ অর্থাৎ ভারত ও চীন থেকে আমদানি বেশি। এতে কোনো ক্ষতি নেই। কারণ, দেশ দুটি থেকে আমদানি কাঁচামাল ব্যবহার করে উৎপাদিত পণ্যই আমরা যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউতে রপ্তানি করি। আর ভারত-চীন থেকে আমদানির কারণ, দামে সস্তা ও তুলনামূলক কম সময়ে পাওয়া যায়।’
সেলিম রায়হান আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারকে লক্ষ্য করেই গড়ে উঠেছে। আমরা রপ্তানিতে পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ করতে পারিনি। এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর রপ্তানির ওপর চাপ তৈরি হবে। কিন্তু চীন, ভারতসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো আমাদের পণ্য রপ্তানির জন্য সম্ভাবনাময় বাজার হতে পারে।’